Tue. Aug 5th, 2025

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: টিফিন, ভাগ্য এবং এক বিভীষিকার রোজনামচা

মঙ্গলবার সকাল। উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের আকাশ-বাতাস শোকে ভারী। একদিন আগের বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্কুল ভবনটি। নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ি উঠে যাওয়ার পর সহপাঠী হারানো শিক্ষার্থী, সন্তান হারানো অভিভাবক আর সহকর্মী হারানো শিক্ষকদের আহাজারিতে পরিবেশ ছিল হৃদয়বিদারক। মাইলস্টোন কলেজের এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পড়ুন।

 

“স্কুলে গিয়ে কিছু কিনে খাইয়ো” – যে কথায় বাঁচল একটি প্রাণ

 

বিধ্বস্ত ভবনের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল চোখে দাঁড়িয়ে ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মোহাইমিন আরিয়ানের মা আশফিয়া মুমতাজ শিল্পী। দুর্ঘটনার দিন ছেলেকে টিফিন দিতে না পারার আফসোসই যে ছেলের জীবন বাঁচিয়ে দেবে, তা কে জানত!

শিল্পী জানান, “প্রতিদিন আমিই টিফিন দিই। সেদিন পারিনি, তাই টাকা দিয়ে বলেছিলাম, ‘স্কুলে গিয়ে কিছু কিনে খাইয়ো’। ওর বিকেলে কোচিং ছিল, তাই কিছু না খেলে চলত না। ও যখন টিফিন কিনতে নিচে নামতে চায়, ওর স্যার প্রথমে বারণ করেন। অনেক জোরাজুরির পর স্যার রাজি হন এবং ওর সাথে নিচে নেমে আসেন।”

আরিয়ান, তার স্যার এবং আরেক বন্ধু নিচে নামার মুহূর্ত পরেই ঘটে সেই প্রলয়। ভবনের সামনে আসতেই তারা বিকট শব্দ শোনেন এবং দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। চারপাশের ধোঁয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে আরিয়ান দৌড়ে স্কুলের বাইরে চলে যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা বলেন, “আমার টিফিন দিতে না পারাটাই হয়তো ওর জীবন বাঁচিয়েছে, কিন্তু ওর অনেক বন্ধু আজ নেই।”

“স্যার আমাদের বাঁচান!” – শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের চোখে বিভীষিকা ও উদ্ধার

 

স্কুলের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন কেবল দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শীই নন, তিনি একজন বীর উদ্ধারকারীও। সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড শব্দে রুম থেকে বের হয়েই দেখি ভবনের একটা অংশ ভেঙে পড়েছে আর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।”

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। মি. নাসিরউদ্দিন বলেন, “হঠাৎ দেখি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছে, ‘স্যার আমাদের বাঁচান!’। তখন আমি ও আরও কয়েকজন মিলে গ্রিল ভেঙে ১২-১৩ জনকে উদ্ধার করি।”

উদ্ধারকাজ শেষে তিনি যখন নিজের ডিপার্টমেন্ট-এ ফেরেন, তখন দেখেন সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তার ভাষায়, “ভেতরে ঢুকে দেখি আমার ডেস্ক দুমড়েমুচড়ে গেছে, আর উপরে ঝুলছে একটি প্যারাসুট। তখনই বিমানবাহিনীর সদস্যরা অনুসন্ধান শুরু করে এবং আমার ঘরের এক কোণ থেকে পাইলট-কে উদ্ধার করে। টিনের চাল ভেঙে তিনি সরাসরি আমার ঘরেই পড়েছিলেন।”

তদন্ত ও অমীমাংসিত প্রশ্ন

 

দোতলা ওই বিধ্বস্ত ভবনটিতে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হতো। শিক্ষকদের মতে, ভবনটিতে ১২-১৩টি শ্রেণিকক্ষ ছিল এবং প্রতিটিতে গড়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস করত। দুর্ঘটনার সময়টা ছিল টিফিনের বিরতি, তাই অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাসের বাইরে ছিল, যা হয়তো আরও বড় বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করেছে।

প্রভাষক মো. রেজাউল হক জানান, “সাধারণত ক্লাস চলাকালীন দুই তলা মিলে ২০০-এর বেশি শিক্ষার্থী থাকে। নিচতলায় ছিল প্রায় ১০০-১২০ জন। বিমানটি নিচতলায় আঘাত করায় তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো সাইমা আক্তারের শেষ কথাগুলো জানতে এখানে পড়ুন।

মঙ্গলবার সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। দুর্ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ জানতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। এই বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানতে এখানে পড়ুন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হতাহতের আনুষ্ঠানিক কোনো সংখ্যা প্রকাশ না করায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে। স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকরা বর্তমানে বিধ্বস্ত ভবনটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে।

এই শোকাবহ ঘটনার খবরের পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে এগিয়ে নিতে ফড়িং বিভিন্ন শিক্ষামূলক উপকরণ প্রকাশ করে থাকে। দৈনন্দিন ব্যবহৃত ১০০টি ইংরেজি বাক্য শিখতে এই লিঙ্কে যান।

 

By prantik

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *