সম্প্রতি ইসরায়েল গাজা সিটিতে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই অভিযানে ৬০,০০০ রিজার্ভ সৈন্যকে তলব করা হয়েছে এবং এর লক্ষ্য হলো গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আক্রমণ কি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে? এই পোস্টে আমরা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব।
কী ঘটছে গাজায়?
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র এফি ডেফরিন নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) গাজা সিটির উপকণ্ঠে তাদের অবস্থান শক্ত করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক ঘাঁটিগুলোকে ধ্বংস করা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন, এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নির্দেশ দিয়েছেন যেন দ্রুততার সাথে হামাসকে পরাজিত করা হয়।
এই অভিযানের ফলে উত্তর গাজার হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণের দিকে সরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ব্যাপক বিপদ ডেকে আনবে।
মানবিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই ভয়াবহ। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে শত শত মানুষ অনাহারে মারা গেছে, যাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। ইসরায়েল মানবিক সহায়তার প্রবেশ সীমিত করায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। যদিও ইসরায়েল অতিরিক্ত সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলছে, কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো মনে করে যে এটি যথেষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই অভিযান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। হামাস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে “পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন রয়েছে ইসরায়েলের প্রতি, যা মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবির বক্তব্যে স্পষ্ট। তিনি বলেছেন যে, ট্রাম্প হামাসকে নিরস্ত্র করার ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন। তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রতিবাদ বাড়ছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধ বন্ধের এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কি এখনও আছে?
সাম্প্রতিক এই আক্রমণ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে যখন হামাস আরব মধ্যস্থতাকারীদের একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। এই প্রস্তাবে জিম্মিদের আংশিক মুক্তির কথা বলা হয়েছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেলআতি জানিয়েছেন যে, “এখন বল ইসরায়েলের কোর্টে।”
তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবকে উপেক্ষা করছেন বলে মনে হচ্ছে। তার কার্যালয় থেকে কোনো নিশ্চিত জবাব আসেনি, এবং তিনি বরং গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পশ্চিম তীরে নতুন বিতর্কিত প্রকল্প
এই সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি বিতর্কিত বসতি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পটি কার্যকর হলে পশ্চিম তীর দুই ভাগে বিভক্ত হবে, যা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে ফিলিস্তিনি এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো আশঙ্কা করছে।
আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্যোগকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি “উৎপাদনশীল নয়” বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, এমন একতরফা পদক্ষেপ শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করবে।
সব মিলিয়ে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান কেবল সংঘাতকেই তীব্র করছে না, বরং একটি স্থায়ী সমাধানের পথকেও কঠিন করে তুলছে।
আপনার মতামত কী?
এই জটিল পরিস্থিতিতে আপনার কী মনে হয়? ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান কি সঠিক পদক্ষেপ? নাকি যুদ্ধবিরতিই একমাত্র পথ? নিচে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করুন।